বিসিএস প্রস্তুতি কৌশল

প্রস্তুতি শতভাগ পুরো করতে দরকার একটু কৌশল ও পরিকল্পনা! ফাইট করুন শেষ পর্যন্ত।

বিসিএস প্রস্তুতি কৌশল

  ১. বিসিএস ক্যাডার হতে হলে সব বিষয়ে অলরাউন্ডার হতে হয়; কিন্তু প্রিলিতে টিকতে অলরাউন্ডার না হলেও চলে। কেউ যদি ইংরেজি আর গণিতে ৩৫+৩০ = ৬৫-এর মধ্যে শূন্যও পায়, তবু ২০০-৬৫ = ১৩৫ পেয়েও সেই প্রার্থীও প্রিলিতে টিকতে পারে। তাই আপনার দুর্বলতাকে ভয় না পেয়ে শক্তিটাকেই কাজে লাগান, প্রিলি টিকে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

  ২. বিসিএস প্রস্তুতি বিশেষ কৌশল বিগত বছরের বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিবছর সাধারণত ৬০ শতাংশের মতো (সেই হিসাবে ২০০টি প্রশ্নের মধ্যে ১২০টি) প্রশ্ন কমন পাওয়া যায় বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে, বাকি ৪০ শতাংশ প্রশ্ন নতুন হতে পারে। তাই যাঁদের প্রস্তুতি খুব একটা ভালো নয়, পরীক্ষার আগের দুই সপ্তাহ বিসিএস প্রশ্নব্যাংক ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিশেষ সংখ্যা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া পিএসসি ও অন্যান্য নিয়োগ প্রশ্নগুলো বারবার পড়ে যান, উপকার পাবেন।

  ৩. আগামী দুই সপ্তাহে যতটুকু পড়বেন, বাসায় মডেল পরীক্ষা দেবেন তার চেয়েও বেশি। সময় ধরে বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিলে পরীক্ষার হলের টাইম ম্যানেজমেন্ট যেমন আপনার আয়ত্তে আসবে, সিক্স সেন্স প্রয়োগ করে আন্দাজে প্রশ্নের উত্তর করলে কয়টার মধ্যে কয়টা ঠিক হয়, সে ধারণাও আপনি পাবেন।

  ৪. এত দিন যা পড়েছেন, সেগুলোই গুছিয়ে নিন, বারবার রিভিশন দিন। খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলে নতুন করে কিছু পড়তে যাবেন না। এতে শুধু মানসিক দুশ্চিন্তাই বাড়বে। প্রিলি পরীক্ষায় আপনাকে ২০০-তে ২০০ নম্বর পাওয়ার প্রয়োজন নেই। মোটামুটি নিরাপদ এরকম একটি নম্বর নিশ্চিত করতে পারলেই হলো (আনুমানিক ১২০+ নম্বর)। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর ক্যাডার নির্ধারণে যোগ করা হয় না। এই পরীক্ষা শুধু লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ‘ইয়েস কার্ড’ মাত্র। তাই, কে কত পারতেছে সেদিকে লক্ষ্য করবেন না।

  ৫. পরীক্ষার দিন পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন। এটিই আপনার আসল প্রস্তুতি। অনেক প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষার আগে অসুস্থ হলে আপনার এত দিনের প্রস্তুতি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাবেন। পরীক্ষার কারণে অনিদ্রা বা ‘সব ভুলে গেছি’ এরকমটা মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। এটিকে স্বাভাবিকভাবে নিন।

মনে রাখার কৌশল

আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তারপরও মনে থাকে না কেন?
এই প্রশ্নটি আমাদের সকলেরই, আমরা সকলেই চাই আমাদের পড়া বিষয়, শেখা বিষয় যেন মনে থাকে। কিভাবে পড়লে এটা সম্ভব?
সমাধানটা মোটেও কঠিন নয়। এর জন্য প্রয়োজন যথার্থ কৌশল অবলম্বন করা। প্রথমেই বলে রাখি, মানবমস্তি্স্কের ধারণক্ষমতা অপরিমেয়, তবে তার স্মরণ সক্ষমতা নির্ভর করে কতিপয় শর্তের উপর। সাধারণত আমরা যে পড়াটা শিখি তা প্রায় ২৪ ঘন্টা স্মরণে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে বিস্মরণ হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে পড়ালেখায় আমরা নিন্মোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করবো,,,,,
   ১. প্রথমেই একটি পড়ার রুটিন তৈরি করবো
   ২. একটা নোট খাতা থাকবে যেখানে প্রতিদিনের পঠিতব্য বিষয়গুলোর নাম লিখা থাকবে,
   ৩. দিনের শুরুতে খাতার উপরে ঐদিনের তারিখ ও বার লিখতে হবে, বামপাশে বিষয় আর একেবারে ডানপাশে রিভিশন লিখতে হবে
   ৪. রিভিশন এর নিচে আন্ডারলাইন করে লিখতে হবে ৩ টি লাইন, নিম্নের অনুকরণে,
     >আগামীকালের বারের নাম
     >আগামি সপ্তাহের আজ যে বার তার নাম
     >আজ যে তারিখ, আগামী মাসের সেই তারিখ
  ৫.এখন আজ যা পড়লাম তা খাতার বামপাশে লিখে রাখতে হবে এভাবে, বাংলা পৃষ্ঠা ১-১০
    ইংরেজি পৃষ্ঠা ১-৬ ইত্যাদি।
    ধরি খাতার উপরে লিখা আছে, ২/৫/২০২০ শনিবার, তাহলে খাতার ডানপাশে লিখা থাকবে এরকম,
   >রবিবার
   >শনিবার
   >২/৬/২০২০
  ৬. এখন কাল পড়তে বসে শুরুতেই আজ যে সকল বইয়ের যা যা পড়েছি তা রিভিশন দিয়ে রবিবার লিখার উপর ঠিক চিহ্ন দিতে হবে। তারপর আবার নতুন পড়া        শুরু।
 
  ৭. এভাবে ১ সপ্তাহ পরে, প্রতিদিন ২ ধরনের রিভিশন দিতে হবে, একটা গতকালের আরেকটা গত সপ্তাহের আজকের এই দিনের, অতঃপর ঠিক চিহ্ন দিতে হবে।        আর ১ মাস পর প্রতিদিন ৩ ধরনের রিভিশন।
 
  ৮. রিভিশনে শুধুমাত্র একবার পড়ে গেলেই হবে। অর্থাৎ, ১ দিনের সমস্ত শিখা বিষয় ৩০ মিনিটেই রিভিশন দেয়া যাবে।
এই প্রক্রিয়া আপাত কঠিন মনে হলেও ১ সপ্তাহ অনুসরণ করলেই খুবই সহজ মনে হবে। আর আপনার শেখা বিষয় আপনার মস্তিষ্কে স্হায়ী হবে, যা আপনি সহজে ভুলবেন না।
অনুসরণ করুন, উপকার পাবেন সুনিশ্চিত।
 

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি –  প্রিলি প্রস্তুতি

 
সীমাহীন পড়া ও জানার বিষয়! কিন্তু যথার্থ কৌশল অবলম্বন করে এক্ষেত্রে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব। আমরা সবাই জানি, প্রিলির মার্ক যোগ হয় না তারপরও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কেননা এর মাধ্যমেই লিখিত পরীক্ষায় বসার অনুমতি মিলে। প্রিলির প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে যে তিনটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি গত কয়েকদিন, আমি জানি অধিকাংশ পরীক্ষার্থীদের মনেই এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খায়।
  > কোন কোন বই পড়ব?
  >দৈনিক কতঘন্টা পড়ব?
  >কিভাবে পড়ব?
প্রথমেই বলে রাখি, একেকজনের সফলতার কৌশল একেকরকম হয়, আর কৌশল যাই হউক দিন শেষে যারা সফল, তাদের কৌশলকে সফলতার কৌশল হিসেবেই গণ্য করা হয়। আমি এখানে আমার অনুসরণ করা কৌশলের আলোকে প্রশ্ন তিনটির উত্তর দেওয়ার প্রচেষ্টা করছি।
 
  >প্রথমেই আসি কোন বই পড়ব এই প্রসঙ্গে। আমি প্রিলির জন্য প্রফেসর ‘স এর এক সেট বই কিনেছিলাম, প্রতি মাসের কারেন্ট এ্যফেয়ার্স, সাহিত্য জিজ্ঞাসা বইটি, আর ৩ টি মডেল টেস্ট বই।
 
  >এবার আসি কতো ঘন্টা পড়ব সেই প্রশ্নে। দৈনিক কত ঘন্টা পড়ব, এটি একটি অবান্তর প্রশ্ন। কেননা এটা ছাত্রের ধারণক্ষমতার উপর নির্ভর করে। কেউ আছেন ২ ঘন্টায় যা শিখতে পাড়েন, অন্য কারো তা ৫ ঘন্টা লাগে। তবে শিখতে সবাই পারেন, কেউ অতিদ্রুত, কেউ দ্রুত, কেউ ধীরে। কাজেই দৈনিক কয় ঘন্টা পড়ব, সেটা নির্ভর করছে স্বয়ং পরিক্ষার্থীর শেখার ও জানার সক্ষমতার উপর। এক্ষেত্রে আমি দৈনিক ৩/৪ ঘন্টা গড়ে ৩ মাস পড়েছিলাম। একটা কথা মনে রাখতে হবে, একদিন ১৫ ঘন্টা পড়লাম আর ৩ দিন বই স্পর্শ করলাম না, সেটা মূল্যহীন। নিয়মানুবর্তিতা সফলতার জন্য অত্যাবশ্যক।
 
>কিভাবে পড়ব। এক্ষেত্রে আমি আজকের আলোচনার প্রথমে উল্লেখকৃত পন্থা অবলম্বন করেছিলাম।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো, লক্ষ্য থাকবে সামনে তবে অমূল্য বিদ্যার মূল্য নির্ধারণ করে তা অর্জন করা যায় না।
 
সকলের জীবনে সফলতার দিনটি আসুক অচিরেই, সেই কামনা করি। ভালো থাকবেন সবাই।

বাংলা 
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এ অংশের পূর্ণমান ৩৫। এর মধ্যে সাহিত্যে ২০ এবং ভাষা তথা ব্যাকরণ অংশে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। সাহিত্য অংশের ২০ নম্বরের মধ্যে ০৫ নম্বর প্রাচীন ও মধ্যযুগ এবং ১৫ নম্বর আধুনিক যুগের সাহিত্য থেকে আসে। এ অংশের প্রস্তুতির জন্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসবিষয়ক কোনো বই পড়তে পারলে ভালো হয়।

তবে সময়স্বল্পতা ও মনে রাখার ক্ষেত্রে তা অনেকের জন্যই দুষ্কর। তাই বাজারের যেকোনো গাইড বই থেকে এ অংশ ভালোভাবে মুখস্থ করতে হবে। আর কিছুদিন পর পর রিভিশন করতে হবে; কারণ এ অংশ পড়ার চেয়ে ভোলা বেশি সহজ। সঙ্গে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্য কর্মগুলোর নাম পড়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেসব কবি-সাহিত্যিকদের ওপর সচরাচর বেশি প্রশ্ন আসে (যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, বেগম রোকেয়া, দীনবন্ধু মিত্র, জসীমউদদীন, কায়কোবাদ প্রমুখ), তাঁদের সাহিত্যকর্মের ব্যাপারে বিশেষ জোর দিতে হবে। সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রেও একই কৌশল প্রযোজ্য।

ব্যাকরণ অংশের সিলেবাসে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, পরিভাষা, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ, পদ, বাক্য, প্রত্যয়, সন্ধি ও সমাস অন্তর্ভুক্ত আছে। এগুলোর জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বোর্ড বই থেকে বিষয় ধরে ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, বাক্য পরিবর্তন, শব্দ গঠন—এ টপিকস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসেও অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলো উচ্চ মাধ্যমিকের কোনো ব্যাকরণ বই থেকে পড়তে পারলে আরও ভালো। তবে অন্ততপক্ষে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইটা অবশ্যই পড়া উচিত; সঙ্গে কোনো গাইড থেকে বিগত বছরের বিভিন্ন প্রশ্ন (বিশেষত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার) ভালোভাবে সমাধান করতে হবে।

ইংরেজি
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ৩৫ নম্বরের মধ্যে সাহিত্যে ১৫ এবং ভাষা তথা গ্রামার অংশে ২০ নম্বর বণ্টিত আছে। সাহিত্যের জন্য কোনো একটা গাইড বই থেকে বিগত সালের প্রশ্নের আলোকে দাগিয়ে পড়তে হবে। যেসব বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়, যেমন- শেকসপিয়ার, রোমান্টিক যুগের কবি, বিভিন্ন যুগের বিস্তারকাল ও সাহিত্যগত বৈশিষ্ট্য, ইংরেজি সাহিত্যের ছন্দ ও অলংকার, বিভিন্ন বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের পঙ্ক্তি ও উদ্ধৃতি প্রভৃতি খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে এবং বারবার রিভাইজ করতে হবে। গ্রামারের জন্য যেকোনো প্রচলিত গ্রামার বই অনুসরণ করা যেতে পারে। পার্টস অব স্পিচ, ক্লসেস, ইডিয়মস অ্যান্ড ফ্রেজ, সেন্টেন্স অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন্স—সিলেবাসের এ অংশগুলো রুলস বুঝে বুঝে প্র্যাকটিস করতে হবে। কারেকশন ও ভোকাবুলারির জন্য কোনো গাইড বই; সঙ্গে পত্রিকা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিবন্ধ পড়া যেতে পারে।

এ ক্ষেত্রে একটা ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নিয়মিত অজানা ওয়ার্ড নোট করা যেতে পারে। ইংরেজি অংশে ভালো করতে বেশি বেশি অনুশীলনের বিকল্প নেই। কোনো একটি গাইড বই থেকে সিলেবাস অনুযায়ী বিগত বিসিএসের প্রশ্ন, পিএসসির নন-ক্যাডারের প্রশ্ন, বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি চাকরির প্রশ্ন অবশ্যই বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে। আর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ইংরেজি অংশের উত্তর করতে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। কেননা এগুলোতে কনফিউশনে পড়ে অনেক সময় ভুল হয়ে যায়, আর নেগেটিভ মার্কস গুনতে হয়। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকুন আর নির্ভার হয়ে পরীক্ষার হলে উত্তর করুন। বিশ্বাস রাখুন; ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

বিসিএস প্রস্তুতি কৌশল

বিসিএস প্রস্তুতি কৌশল

Leave a Comment